মোঃ আব্দুল্লাহ বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধিঃ
সিলেটের বিশ্বনাথে পশু চিকিৎসকের লালসার শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এক দরিদ্র কৃষককন্যা ও তার পরিবার। ওই চিকিৎসকের কথিত ‘বিয়ের ফাঁদ’ এ পা দিয়ে শিকার হয়েছেন চরম বিড়ম্বনার। প্রতারণার মাধ্যমে উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন দেখিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার না করেই কেবল মৌখিকভাবে বিয়ে করেন ওই চিকিৎসক। পরে ৯ মাসের মাথায় সাদা কাগজে সই নিয়ে দেন তালাক। এ ঘটনায় উভয়কূল খুইয়ে অসহায় কৃষক পরিবার সংশ্লিষ্ট অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাননি কোন সুুরাহা।
জানা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ভিএফএ পদে কর্মরত রয়েছেন নেত্রকোনার সদর উপজেলার বামুনীকুনা গ্রামের আবদুুল গফুরের ছেলে মো. সাদেকুল ইসলাম। গবাদি পশুর চিকিৎসা করার সুবাদে তিনি উপজেলার তাঁতিকোনা রাজমোহাম্মদপুরের দরিদ্র কৃষক হুসমত আলীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন। তখন কুনজর পড়ে কৃষকের বিবাহিতা কন্যার প্রতি। স্বামী পরিবারের সাথে সম্পর্ক ভালো না হওয়ায় বাবার বাড়িতেই থাকতেন ওই মেয়ে। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে জমান মেয়েটির সাথে। পরে বিয়ের প্রস্তাব দিলে মেয়ে বিবাহিত ও তার নিজেরও স্ত্রী-সন্তান থাকায় নাকচ করে দেন পিতা। পরে, ঘরবাড়ি নির্মাণ, সাথে নগদ অর্থ প্রদান ও পরিবারের যাবতীয় ব্যয় বহনের লোভ দেখিয়ে আদায় করেন সহজ-সরল কৃষক পরিবারের সম্মতি। নিজ খরচে কোর্টের মাধ্যমে আগের স্বামী থেকে ছাড়িয়েও আনেন ওই মেয়েকে।
পরে, নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিয়ের কথা থাকলেও একদিন সন্ধ্যায় (২৩.০৩.২০২৩ইং) দু’জন হুজুর নিয়ে হাজির হন কনের বাড়ি। নিকাহনামা পরে সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পাদন করা হয় নামমাত্র কথিত বিয়ে। দেয়া হয় নগদ লক্ষ টাকা দেনমোহর। তখন ধারণ করতে দেয়া হয়নি কোনো ছবি বা ভিডিও চিত্রও। ওইদিনই ওই মেয়েকে পৌরশহরের ভাড়া বাসায় নিয়ে তোলেন সাদেকুল। সংসার করেন প্রায় ৮ মাস। মেয়ের কাছে যেতে চাইলেও তার আপত্তির কারণে বাসায় একদিনও যাওয়া হয়নি তার মা-বাবার। প্রতিদিন তাকে রাখা হতো তালাবদ্ধ করে। বিষয়টি সহজ ভাবে নিচ্ছিলেন না ওই মেয়েও। এ নিয়ে হয় বাকবিতন্ডাও। এক পর্যায়ে তিনি চলে যান পিত্রালয়ে। কিছু দিন তার কাছে যাতায়াত করেন সাদেকুলও।
এরমধ্যে গেল বছরের ২৪ নভেম্বর মেয়ের বাবাকে ডেকে নিয়ে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে নেন টিপসই। আগেই ভূল বুঝিয়ে নিয়ে রাখেন ওই মেয়ের স্বাক্ষরও। পরে হঠাৎ বন্ধ করে ফেলেন যোগাযোগ। জানতে চাইলে ওই মেয়েকে সাদেকুল জানান, ‘আমি তোমাকে তালাক দিয়েছি। আমাদের উভয়ের সম্মতিতেই এটি সম্পাদন করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় প্রাণিসম্পদ অফিসে বিচার প্রার্থী হয়েও কোন সুরাহা পাননি তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পশু চিকিৎসক সাদেকুল ইসলাম বলেন, অনাথ হিসেবে মেয়েটিকে আমি আশ্রয় দিয়েছিলাম। আমি তাদের ভালো করতে গিয়ে তারা আমার পিছু নিছে। তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুবাদে পরিচয়। আগের বিয়ে বনিবনা না হওয়ায় সে ডির্ভোস নেয়। পরে অনত্র বিয়ে দিতে চাইলে আমি প্রস্তাব দেই। তারাও রাজি হন। আমার স্ত্রী-সন্তান আছে। সে কারণে এ বিয়ের বৈধ কোন ডকুমেন্ট করা যায়নি। আর মানবিক কারণে আমি তাকে বিয়ে করি। পরে তাদের সাথে নানা বিষয়ে সমস্যা দেখা দেয়ায় তাদের সম্মতি দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ করে লিখিত ভাবে আমরা পৃথক হই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: নাহিদ নাওরনি সুুলতানা বলেন, বিষয়টি আমার অফিসের এক স্টাফের কাছ থেকে ইতিপূর্বে শুনেছি। এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। বর্তমানে আমি ট্রেনিংয়ে আছি। অফিসে ফিরে বিষয়টি দেখছি।