মাহাবুব আলম তুষার মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
পদ্মায় অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু; ক্ষতিগ্রস্ত পাউবোর বাঁধ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ধুলশুড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছে একটি চক্র।
এসব বালু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাল্কহেডের মাধ্যমে পরিবহন করে আনলোড ড্রেজার দিয়ে ধুলশুড়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং পাইপের জন্য বাঁধের বালুভর্তি জিও ব্যাগ ছিদ্র করে বাঁশ পুঁতে রাখায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধ।
ইতোমধ্যে বাঁধের কয়েকটি স্থানে ধ্বস নেমেছে। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সরজমিনে দেখা যায়, আল সাফা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সেই বালু বাল্কহেডে করে এনে আক্কাস মোল্লা ডকইয়ার্ড ড্রেজার নামের আনলোড ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন ধরে উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের ঝিটকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রেজিষ্ট্রেশনের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রধান শিক্ষক
এসব বালু বাল্কহেড দিয়ে পরিবহন করে এনে আনলোড ড্রেজারের মাধ্যমে বিক্রির জন্য ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। ড্রেজারে ও আনলোড ড্রেজারের কয়েকজন শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মহব্বত চৌধুরী, তার ভাই হায়দার চৌধুরী এবং ধুলশুড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য শাহীন মৃধা এবং তার বড় ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক মৃধা প্রায় ১৫ দিন ধরে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছেন।
প্রায় তিন মাস আগে অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে ওই এলাকার ২৪টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পাশাপাশি ১২০০ মিটার অংশে জিও ব্যাগ ভর্তি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন আবার অবৈধ ড্রেজিং শুরু হওয়ায় পুনরায় নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ধ্বস নেমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীন মৃধা বলেন, যে জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে, সেই জায়গা আমাদের। আমি আর আমার বড় ভাই রফিক মৃধা বালু ফেলার জায়গা প্রতি বিঘা বছরে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছি। আমরা ড্রেজারের সাথে জড়িত নই। ড্রেজার চালাচ্ছেন মহব্বত চৌধুরী ও তার ভাই হায়দার চৌধুরী। জানতে চাইলে হায়দার চৌধুরী তার এবং তার ভাইয়ের ড্রেজারের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। হায়দার চৌধুরী প্রতিবেদককে ম্যানেজের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে বিভিন্নজনকে ফোনে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে, মহব্বত চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি। ধুলশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহেদ খান বলেন, কিছুদিন পূর্বেই নদীভাঙনে ২৪টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আবারও অবৈধভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। জরুরিভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে আবারও নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানিকগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে জানাচ্ছি।