নাজমুল কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহতের ঘটনায় দুটি পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। একটি মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও অন্য আরেকটি মামলায় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
দুটি মামলার নিহতরা হলেন, কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার লুকমান হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩) এবং সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের শালদাহ গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে বাবু (৩২)। আবদুল্লাহ বাবার সঙ্গে শহরের ফায়ার সার্ভিসের সামনে অবস্থিত চায়ের দোকানে কাজ করত। আর বাবু স্বর্ণ ব্যবসায়ী ছিলেন। এজাহার সূত্রে, গত৫ আগস্ট বিকেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে তাঁদের উপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে, এছাড়া দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে।
পরে তাদের উপর গুলিও চালানো হয় বলে জানা গেছে। দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এঁদের মধ্যে বাবু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।নিহত আবদুল্লাহর বাবা লোকমান বাদী হয়ে মামলা করেন এবং নিহত বাবুর পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাইসুল হক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
এর মধ্যে আবদুল্লাহর হত্যা মামলায় মাহবুব উল আলম হানিফকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অপর আসামীরা হলেন, আতাউর রহমান আতা, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার, ২নং ওয়ার্ড পৌর কাউন্সিলর ধীমান, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষণা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। কাটাইখানা মোড়ের মৃত তোফাজ্জলের ছেলে সোহেল রানা (৪২), কালিশংকরপুরের মৃত আলাউদ্দিন মন্ডলের ছেলে আরিফ হোসেন(৪২), কোটপাড়া (ঈদগাপাড়) মৃত নিলুর ছেলে রনি(৪৩), সরকারি কলেজের পাশের মিন্টু (৪০)পিতা অজ্ঞাত, সরকারি কলেজ হোস্টেলের পিছনে মান্নানের পুত্র আনোয়ার হোসেন (৪৫), কোটপাড়া (ঈদগাহ পাড়া) হান্নান বিশ্বাস (৫৫)পিতা অজ্ঞাত, নারকেল তলার মীর জাফরের পুত্র সাইদুল ইসলাম (৫০), ঈদগা পাড়ার তরুন (৫৫), নিপুন (৪২) সহ অজ্ঞাত নামা ১০/২০জন। আর বাবু হত্যা মামলায় আতাউর রহমান আতাকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। এ মামলায় আসামীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী। শহর ছাত্র লীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশী, জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক, সরকারি কলেজ ছাত্র লীগের সভাপতি ফেরদৌস।
হাবিবুর রহমান হাবি (৫০), কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু, মহিদুল কমিশনার (৪৫), মাহাবুল (৫০), কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ বিচ্চু, হরিপুরের মিলন মন্ডল, কাউন্সিলর কিশোর কুমার জগৎ, শহর আওয়ামী লীগের সদস্য ফজলে করিম খোকা, কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, পল্লব (৪৭), ব্যারিস্টার গৌরব চাকী, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মমীনুর রহমান মোমিজ, মানিক (৪০), কাউন্সিলর তানভীর নোভেল, রুবেল (৩৫), মধু(৪৫), রঞ্জু (৪০), শহর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আল মুনিম, মিনাপাড়ার সাহাজুল ইসলাম, জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, ছেউড়িয়ার নুর মোহাম্মদ পুকাড়ি (৫০), ও তার ছেলে রাজীব হোসেন (৩৮), জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার, জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, পাটিকাবাড়ির জহুরুল ইসলাম সহ ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাত নামা উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি মামলায় মোট ৪৯ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি দুটি মামলার বিষয় নিশ্চিত করেন। তবে মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান তিনি।