স্টাফ রিপোর্টার
ভোলায় উপজেলা ভূমি অফিসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আলী আকবর বর্তমানে মিসকেস সহকারী পদে চাকরি করছেন ২০১৬ সাল থেকে। তিনি নামে-বেনামে গড়েছেন বিশাল সম্পত্তি। সম্প্রতি কালো টাকা সাদা করতে বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন গরুর খামার। বাবা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও নামের সঙ্গে মিল থাকা দৌলতখানের এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে কোটায় চাকরি তার। শুধু তিনি নন, অপর দুই ভাই আলী আজগর ও মিজানুর রহমান একই সনদে ভোলা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে কনস্টেবলের চাকরি নেন। আলী আজগর পিবিআইতে থাকা অবস্থায় গেল বছর কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পান। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য তিন বছর আগে যুগান্তরে প্রকাশ পেলে নামমাত্র তদন্ত টিম গঠন ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
ডাক্তার ছাড়া ১৪ দিনে ঘরে বসে জয়েন্টের চিকিত্সা করার ১ সহজ উপায় দৌলতখানের বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন রোববার বিকালে টেলিফোনে যুগান্তরকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তার দুই ছেলে কাজী আন্দালিভ আমিন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ বাংলাদেশ (আইসিএসবি) পরিচালক পদে ও কাজী নওরিন আমিন কানাডায়, দুই মেয়ে কাজী হুমায়রা নির্ঝর অনুপ্রাণ চাইল্ড ইনস্টিটিউটের সিইও পদে এবং ছোট মেয়ে কাজী তাহিত তাজরিয়ান সুপন্তি চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। তারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন না। অথচ তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ (এমআইএস) ও লালমুক্তি বার্তা ব্যবহার করে ভোলা সদরের ভেলুমিয়া এলাকায় বসবাসকারী প্রতারক রুহুল আমিন কাজীর তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন। একইভাবে রুহুল আমিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলছিলেন। বিষয়টি যুগান্তরের মাধ্যমে নজরে আসার পর ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর তিনি ভোলা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।
আরো পড়ুন ছাত্রী ধর্ষণ, গ্রেপ্তার শিক্ষক বললেন, ‘শয়তানের প্ররোচনায়’ তিনি আরও জানান, তার বাবার নাম কাজী রুস্তম আলী। অপরদিকে প্রতারক রুহুল আমিন কাজীর বাবার নাম ছেলামত কাজী। এদিকে উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত আলী আকবরের ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেন্বর প্রকাশিত নিয়োগ আদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পাওয়া ২১ জনের তালিকার তিনি রয়েছেন ১৮ নম্বরে।
আরো পড়ুন ‘রেস্তোরাঁয় আনসার-পুলিশ ও র্যাবের অভিযান একটু বাড়াবাড়ি’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে তিনি তার বাবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদপত্র জমা দেন। ওই সনদ ছিল কাজী রুহুল আমীন, পিতা মৃত কাজী রোস্তম আলী, গ্রাম চর লামছিপাতা, রাধাবল্লভ, দৌলতখান, জেলা ভোলা নামে। অথচ তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, নাম মো. রুহুল আমিন কাজী, জন্ম ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩, পিতার নাম ছেলামত কাজী, মাতার নাম ফিরোজা খাতুন, স্ত্রীর নাম ফরিদা খাতুন। ভোটার এলাকা চন্দ্র প্রসাদ ৪নং ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ভেলুমিয়া, উপজেলা ভোলা সদর। আলী আকবরের নিয়োগ আদেশের ৫টি শর্তের ৫ নম্বরে উল্লেখ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সুপারিশকৃত প্রার্থীদের সনদ যাচাই অন্তে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রমাণ পাওয়া না গেলে নিয়োগ বাতিল বলে গণ্য হবে। জেলা প্রশাসকের টিমের তদন্তকালে রুহুল আমিন কাজী স্বীকার করেন, তার বাবার নাম ছেলামত কাজী। দৌলতখানের (বর্তমানে ঢাকায় থাকা) রুহুল আমিন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আরও স্বীকার করেন, সনদ টেম্পারিং কাজে তিনি ও ছেলেরা জড়িত ছিলেন। এমন স্বীকারোক্তির ভিডিও রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে। এর পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।